ভিজিটিং কার্ড
১। লোগো ও ট্যাগলাইন
কি কি তথ্য কার্ডে লিখবেন তা ঠিক করার আগে দেখে নিন আপনার লোগো ও ট্যাগলাইন ঠিকমত দেয়া হয়েছে কিনা। যেহেতু আপনার ভিজিটিং কার্ড আপনার ব্র্যান্ডের একটি এক্সটেনশন, এতে অবশ্যই আপনার ব্যবসায়িক পরিচিতি থাকতে হবে, এই কার্ড যেন এর সাইজ, রঙ ও অন্য সকল বৈশিষ্টের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার পরিচিতি তুলে ধরে।
একজন বাহক যেন কার্ডটি হাতে নেয়া মাত্রই পরিষ্কারভাবে আপনার ব্যবহার ব্র্যান্ড ও পরিচিতি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে, পরবর্তীতে যে আপনার ব্যবহার লোগো বা নাম দেখলেই যেন সাথেসাথে আগে দেখা ব্র্যান্ডিং এর সাথে মিলিয়ে চিনে ফেলতে পারে। অন্যত্র যেমন আপনার ওয়েবসাইট, পোর্টফোলিও বা নিউজলেটারের ব্র্যান্ডিং দেখে সে আপনার ভিজিটিং কার্ডের কথা মনে করে চিনে নিতে পারবে।
২। নাম ও জব টাইটেল
এই ব্যপারে না বললেও বোঝা যায়, তাই না? কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন, কত মানুষ এই সামান্য জিনিষটি ভুল করে বসে থাকে। প্রথমে আপনার নাম। ধরেন আপনার নাম শামীমুজ্জামান, কিন্তু আপনি নিজেকে শামীম নামে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন, বা আপনাকে সবাই স্যাম নামেই চেনে - এক্ষেত্রে, আপনাকে মানুষ যেই নামে চেনে, সেই নামই কার্ডে ব্যবহার করতে হবে, যে নামে আপনার পরিচয় মানুষ জানেনা, তা কার্ডে ব্যবহার করা দরকার নেই। ভিজিটিং কার্ডে গৎবাঁধা ফর্মাল ইনফরমেশন লিখে না দিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরলে, মানুষ আপনার সাথে পরিচিত হতে আগ্রহী হবে, কথা বলতে কৌতূহলী বোধ করবে। আপনি মানুষের কাছে যেই নামে সম্বোধিত হতে চান, কার্ডে সেই নাম ব্যবহার করলে অযথা অনেক বিব্রতকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
জব টাইটেল কি দেবেন? একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ব্যবসায়ীক কাজে অনেক পদবীই হয়ত আপনি জীবণে ব্যবহার করেছেন নিজের পরিচয় দিতে। তো, কোনটি আপনি আপনার ভিজিটিং কার্ডে লিখবেন? সেই ডেসিগনেশন ব্যবহার করুন - যেটা দিয়ে আপনার ব্যবসায় আপনার কাজ সম্পর্কে টাইটেলটি পড়েই ধারনা পাওয়া যায়। - পরবর্তীতে সেই কাজের জন্যই মানুষ আপনাকে কাজে নিতে চাইবে।
৩। যোগাযোগ
যোগাযোগের তথ্য হচ্ছে ভিজিটিং কার্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অংশ। আপনি যদি চান মানুষ আপনাকে কন্টাক্ট করুক, তাহলে অবশ্যই তাদের যোগাযোগের উপায় করে দিতে হবে। কিন্তু এতো উপায়, এর মধ্যে কন্টাক্ট করার কোন উপায়গুলো কার্ডে দেবেন? এর উত্তর হচ্ছে, সব "ডাইরেক্ট উপায়গুলো"।
স্বভাবতই ভিজিটিং কার্ড প্রস্পেকটিভ ক্লায়েন্টদের সাথে একটি পার্সোনাল কানেকশন তৈরি করতে চেস্টা করে। বাজারী সাধারণ মেইল যেমন [email protected] বা দেখতে গুরুত্বহীন কোন অ্যাড্রেস ব্যবহার করে যেই কানেকশন নষ্ট করা একদমই উচিৎ নয়। বা ল্যান্ডফোনের জেনারেল লাইন, যেখান থেকে আপনাকে খুজে পেতে কয়েকটা এক্সটেনশন পার করতে হয়।
৪। আপনার ওয়েবসাইট, কিন্তু আপনার হোমপেজ নয়।
কেন আপনার ওয়েব অ্যাড্রেস আপনার কার্ডে দেবেন? শুধু আছে বলেই দিতে হবে, এমন নয়। সে তো আজকাল সবাই দেয়। আশা করা যায় যে, যাদের সাথে দেখা হওয়ার পর এত ইমপ্রেসড ছিলো যে বাড়ি ফিরেই আপনার সাইট চেক করে দেখবে, যেন আপনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারে। তাহলে তাদের কি এমন একটি পেজে পাঠানো উচিৎ না, যেই পেজে তাদের জন্য উপযুক্ত ইনফরমেশন থাকবে?
একটি পেজ তৈরি করুন ওয়েবসাইটের জন্য, যেখানে একটি স্বাগতম বার্তা বা শর্ট ভিডিও থাকবে যা আপনার পরিচয় তুলে ধরবে এখন দর্শকদের বোঝাতে সাহায্য করবে যে কি কি কাজে আপনি তাদের সহায়তা করতে পারেন। একটি স্পেশাল অফার দিয়ে রাখতে পারেন, বা কোন বোনাস যেটি ভিজিটররা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন, আপনার সাইটে ভিজিট করার পুরষ্কার হিসেবে। সংক্ষেপে, ওয়েবসাইটের ব্যবহারে যেন নতুন কানেকশনগুলো আরো দৃঢ় হয়, যাদের কাছে আপনার ভিজিটিং কার্ড আছে, তাদের সাথে।
আপনার কার্ডে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলগুলাও অ্যাড করুন কিন্তু সবগুলো নয়। সোশ্যাল মিডিয়া আজকাল আমাদের জীবণের অবিচ্ছেদ্য অংশ, ট্র্যাডিশনাল ও ডিজিটাল ব্যবসা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপুর্ণ। আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ না থাকা মানে হচ্ছে কাস্টমারের কাছে আপনার অস্তিত্ব না থাকা। আদতে আক্ষরিকভাবেই এখন এই অবস্থা।
কিন্তু এই জন্য আপনার সব ৭/৮ টা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল কার্ডে উল্লেখ করতে হবেনা। এখানে আমরা সিম্পল ডিজাইন রুল ফলো করে কাজ করব যা নিয়ে নিচে ৬ নাম্বার পয়েন্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আপনি আপনার সাথে কানেক্ট করার মত যথেষ্ট উপায় কার্ডে উল্লেখ করবেন, কিন্তু চয়েসের আধিক্যে যেন কেউ অনিশ্চয়তায় না ভোগে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার একটা কি দুইটা প্রোফাইল দিলেই যথেষ্ট, যা থেকে সবাই আপনার কাজের সম্পর্কে একটি আইডিয়া পাবে।
হ্যা। হোয়াইট স্পেস এতটাই ইম্পর্টেন্ট, যে এটি নিয়ে আলাদা একটি পয়েন্ট লিখতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে আমরা কিছু এমন ভিজিটিং কার্ড দেখি, যেগুলার মধ্যে ডিজাইন ও তথ্য একটাই ঘিঞ্জি অবস্থায় থাকে যে দেখে অসুস্থ অনুভব হয়। তাইনা? মনে রাখতে হবে যে কার্ডের পয়েন্টগুলো দিয়ে মানুষকে বিরক্ত করে ফেলা যাবেনা, বরং কুশলাদি অবলবদলের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। ঘিঞ্জি কার্ড দেখে সবাই বিরক্ত হয়।
৭। সৃজনশীলতা
এই শেষ টিপস টি হচ্ছে ভিজিটিং কার্ড ডিজাইনের সকল টিপসের টেক্কা। এই সকল টিপসগুলো প্র্যাকটিকেল ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত, যা দিয়ে সাধারণত সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবুও, লাইন কে লাইন সব টিপস ও রুল ফলো করে গেলেও ভালো একটি কার্ড ডিজাইন করা সম্ভব নাও হতে পারে, যদিনা যেটা বোরিং ও প্রেজেনটেশন ভালো না হয় ( যেমন আমরা আগেও অনেকবার হয়ত দেখেছি), তাহলে এই কার্ডের মাধ্যমে কেউই আপনার সাথে সহজে যোগাযোগ করবে না। সে যত হাজার কার্ডই আপনি বিলান না কেন।